কেউ যদি এসে হঠাৎ দাবি করে যে, সে কোনও দিন হেঁচকি তোলেনি বা তার কখনও হিক্কা ওঠেনি, সে কিন্তু সত্যি ভারি মিথ্যেবাদী। এই হেঁচকি তোলা এমন একটা ব্যাপার, যেটা অতি সাধারণ সব্বার কাছে। হেঁচকি তোলা কোনও গুরুতর রোগ নয় বা এর জন্য ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনও পড়ে না। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে হেঁচকি উঠলে সেটা ভীষণ বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। আবার এই হেঁচকি থামানোর চটজলদি কোনও সমাধানও নেই। আপনি না হয় মাথায় এবং অভিজ্ঞতায় অনেকটাই বড়; না হয় একটু হেঁচকি তুললেন দু-এক দিন। কিন্তু বাড়ির পুঁচকে ছানাটা? সেও যদি নিয়ম করে হেঁচকি তুলতেই থাকে, তার বিরক্তির পরিমাণটা ভাবুন তো! বেচারা নিজেকে আরাম দেওয়ার জন্য কিছুই যে করতে পারে না। অগত্যা ভরসা তার মা এবং আপনজনেরাই। ওইটুকু শরীর যদি ক্রমাগত হেঁচকির অত্যাচারে বারবার কেঁপে ওঠে, সেটা প্রাণে ধরে দেখাও যে বড্ড কষ্টের। বাচ্চাদের হেঁচকি ওঠার কিছু সম্ভাব্য কারণ এবং হেঁচকি উঠলে তাকে আরাম দেওয়ার কিছু উপায় যদি আপনিই জেনে রাখেন, তা হলে বাচ্চাটিও উপকৃত হবে আর আপনিও চিন্তামুক্ত থাকবেন। দেখে নিন এক নজরে। (bachchara keno henchki tole?Reasons why your baby has hiccups. Hiccups in newborns and babies in Bangla)
আমাদের শরীরে ফুসফুসের নীচের দিকে থাকে ডায়াফ্রাম। ডায়াফ্রাম একটি নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে প্রসারিত ও সঙ্কুচিত হয়। ফ্রেনিক নামের একটি স্নায়ু এই সঙ্কোচন ও প্রসারণ নিয়মিত রাখে। হঠাৎ কোনও কারণবশত যদি ডায়াফ্রামের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হয় তা হলে তা বেশি মাত্রায় সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হতে শুরু করে। এর ফলে, স্বররন্ধ্র থেকে কিছুটা বাতাস হঠাৎ বেরিয়ে আসে এবং গলা দিয়ে ‘হিক’ মতো অদ্ভুত শব্দ বেরিয়ে আসে। একেই হিক্কা ওঠা বা হেঁচকি ওঠা বলে।
জানেন কী, মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেও শিশুর হেঁচকি ওঠে; আবার নিজেই বন্ধ হয়ে যায়। বাচ্চা জন্মানোর পরে তার যে যে কারণে হেঁচকি উঠতে পারে; সেগুলি হল
শুধু হেঁচকি তোলার সময়েই নয়, প্রত্যেকবার খাওয়ানোর পরও তার পিঠ চাপড়ে দেওয়া জরুরি। শিশুরা দুধ খাওয়ার সময় প্রায়ই অনেক বাতাস গিলে ফেলে। এই বাতাস তার শরীর থেকে বেরিয়ে না গেলে পাকস্থলী ফুলে যায় ও ডায়াফ্রামের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকে শিশু হেঁচকি তুলতে পারে। বাচ্চা হেঁচকি তুললে তাকে সোজা ভাবে ধরুন; আপনার কাঁধে যেন তার মুখের দিকটা থাকে। এরপর পিঠে আলতো করে চাপড়ে দিতে থাকুন। এতে ঢেকুরের মাধ্যমে শিশুর পেটে ঢোকা অতিরিক্ত বাতাস বেরিয়ে আসবে। প্রত্যেকবার খাওয়ানোর পরও এই কাজটি করতে ভুলবেন না। কচি শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পর শিশুর পিঠ চাপড়ালে হয়তো একটু দুধও ঢেকুরের সাথে বেরিয়ে আসবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ছোট্ট বাচ্চারা মাঝেই মাঝেই এরকম মুখ থেকে অল্প দুধ বার করে থাকে। একে চলতি কথায় ‘দই তোলা’ বলা হয়। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে খাওয়ানোর মাঝেও একবার ঢেকুর তুলিয়ে দিলে, পরে হেঁচকি তোলার সম্ভাবনা কমে। আর বাচ্চা যদি বোতলে ফর্মুলা খায় তা হলেও ৫-১০ মিনিট অন্তর এভাবে পিঠ চাপড়ে দিন।
বাচ্চা যখন বুকের দুধ খাবে, তাকে এমনভাবে ধরুন যেন খাওয়ার সময় মুখে বেশি বাতাস না ঢোকে। খাওয়ার সময় যাতে শিশু নিজের সুবিধা মতো শ্বাস নিতে বা থামতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। যেসব বাচ্চা ফিডিং বোতলে দুধ খায়, তারা খাওয়ার সময় সবথেকে বেশি বাতাস গেলে। যে ফিডিং বোতল ব্যবহার করছেন, তার নিপলের ফুটো বেশি বড় হলে এই বাতাস ঢোকার সমস্যা হতে পারে। বোতল উপুড় করে দেখুন ,যদি নিপল থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে দুধ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে ছিদ্র ঠিক আছে। আর যদি বোতলের নিপল থেকে একনাগাড়ে দুধ বেরিয়েই যায়, তা হলে বোতল বা নিপল পাল্টে ফেলুন।
অনেক সময় দেখা যায় যে বাচ্চার হেঁচকি উঠলে কিছুক্ষণ প্যাসিফায়ার মুখে দিলে হেঁচকি কমে যায়।
যদি কোনও পেটজনিত সমস্যার কারণে শিশুর হেঁচকি উঠছে, তা হলে গ্রাইপ ওয়াটার খাওয়ালে সে আরাম পেতে পারে। হেঁচকি উঠলে গ্রাইপ ওয়াটার খাওয়ালে যে তা কমবেই, এমন কিন্তু কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে চেষ্টা করে দেখতেই পারেন।
বাচ্চাকে অতিরিক্ত খাওয়াবেন না। প্রত্যেকবার খাওয়ানোর পরই যদি শিশুর হেঁচকি ওঠে, তা হলে তা অতিরিক্ত খাওয়ানোর জন্যই হচ্ছে। কম কম করে শিশুর প্রয়োজনমতো খাওয়ান। আবার অনেকক্ষণ বাচ্চাকে না খাইয়ে ফেলে রাখবেন না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাকে খাইয়ে দিন।
অনেক সময় শিশুর মন অন্য কোনও কাজে ব্যস্ত রাখলে হেঁচকি ওঠা থেমে যায়।
বাচ্চার হেঁচকি উঠলে মুখে সামান্য চিনি দিন বা একটু লেবু চুষতে বলুন। কিছুক্ষণের জন্য নিশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ রাখলে হেঁচকি তাড়াতাড়ি থেমে যায়। তবে এই শ্বাস বন্ধ রাখার ব্যাপারটা বাচ্চাকে নিজেকে করতে দিন। আপনি বাইরে থেকে কিছু করতে যাবেন না।
শিশুর অবাঞ্চিত হেঁচকি ওঠা বন্ধ করুন সহজেই ( Baby Hiccups: Causes, Prevention & Remedies)
Also read: বাচ্চার ওজন বাড়াতে বেশি খাওয়াচ্ছেন? সাবধান!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null